মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীতে বিএনপির রাজনীতিকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভয়াবহ মিথ্যাচার ও হুমকির ঝড় বইছে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন দোলন এখন ‘ফেইক ফেসবুক আইডি’র টার্গেটে।
সম্প্রতি “টংগীবাড়ী রাজনীতি” নামের একটি বেনামি ফেসবুক আইডি থেকে আমির হোসেন দোলনকে নিয়ে একটি আপত্তিকর পোস্ট ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তার ছবি বিকৃত করে লাল ক্রস চিহ্ন দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে এবং সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে একটি পোষ্ট। পোস্টে লেখা হয়েছে—
“মোঃ আমির হোসেন দোলন ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেট আপনাকে দিচ্ছি! শীর্ষ সন্ত্রাসী শিপন মুন্সি, রাজন মুন্সী
দেওয়ানপাড়া থেকে কত টাকা পায় ইনবক্সে এসে জানাবেন, না হলে জন্মলগ্ন থেকে লেখা শুরু করব…!”
এই হুমকি শুধু মানহানিকর নয়, বরং সরাসরি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর একাধিক ধারা লঙ্ঘনের শামিল। এতে একজন নির্বাচনী রাজনীতিককে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সামাজিকভাবে হেয় করা হয়েছে। পোস্টের ভাষা ও ভঙ্গি দেখেই অনুমান করা যায়, এটি একটি সংগঠিত অপপ্রচারের অংশ।
এই একই চক্র “বালিগাঁও রাজনীতি” নামের আরেকটি ফেক আইডি ব্যবহার করে দোলনের ব্যক্তিগত ইনবক্সে ভয়ভীতি ও অর্থ দাবিমূলক বার্তা পাঠিয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে—
“যে পোস্টগুলো করছে, এগুলা ডিলিট করতে হলে ২০ হাজার টাকা লাগবে। না দিলে প্রতিদিন বিশটা আইডি দিয়ে প্রচার করা হবে… আপনারা যদি গরুর হাটে ৬০ লাখ টাকা পান, আমাদের কিছু না দিলে চলবে না।”
এটি সরাসরি চাঁদাবাজির মতো অপরাধ। এমনকি হুমকির ভাষা ও দাবির ধরণ ডিজিটাল অপরাধ ছাড়িয়ে একটি সংঘবদ্ধ সাইবার চাঁদাবাজ চক্রের উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয়। শুধু তাই নয়, হুমকি পোস্টে বারবার লেখা হয়েছে—
“শেয়ার চাই… অনেক শেয়ার চাই… যদি ইনবক্সে না বলেন তাহলে জন্মলগ্ন থেকে শুরু করব… বলবেন না তো?”
এই উসকানিমূলক ও পরিকল্পিত শেয়ারের আহ্বান থেকে বোঝা যায়, ফেইক আইডিগুলো সাধারণ মানহানির বাইরে গিয়ে একটি রাজনৈতিক নেতার ভাবমূর্তি ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা। তারা বলেন—
“এটি শুধু দোলন ভাইকে নয়, পুরো বিএনপি সংগঠনকেই কালিমালিপ্ত করার গভীর চক্রান্ত। প্রশাসনের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এই ফেইক আইডি এবং এর পেছনে থাকা গডফাদারদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।”
প্রতিবাদ জানিয়ে আমির হোসেন দোলন বলেন—
“আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত। জনগণের ভালোবাসা আমার শক্তি। এখন একটি সুবিধাভোগী মহল আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব ফেইক আইডি দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি এসব কুরুচিপূর্ণ কাজের তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
এ বিষয়ে টঙ্গীবাড়ী থানা সূত্রে জানা গেছে, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ধরণের হুমকি, অপপ্রচার এবং ইনবক্সে অর্থ দাবি সরাসরি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর অন্তর্ভুক্ত গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ। মিথ্যা তথ্য প্রচার, মানহানি, জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানো ও অর্থ আদায়ের হুমকি—সবকিছু মিলিয়ে এটি একটি সংগঠিত অপরাধের দৃষ্টান্ত। একই সঙ্গে এ ধরনের কার্যকলাপ চাঁদাবাজি দমন আইনেরও আওতায় পড়ে।
রাজনীতিতে জনপ্রিয় ও কার্যকর নেতাদের বিরুদ্ধে এমন সাইবার হামলা দিনদিন বেড়েই চলেছে। ফেইক আইডির মাধ্যমে ছড়ানো অপপ্রচার যেন এখন রাজনৈতিক চরিত্রহননের সবচেয়ে সুবিধাজনক হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। অথচ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নীরবতা এসব দুষ্কৃতিকারীদের আরও বেপরোয়া করে তুলছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফেইক আইডি এখন নতুন এক অস্ত্র। এসব বেনামি প্রচারণা কেবল ব্যক্তি নয়, গোটা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। প্রশাসনের নীরবতা থাকলে এই ডিজিটাল বিষবাষ্প আরও ছড়িয়ে পড়বে—এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এই লড়াই একজন দোলনের নয়—এটি প্রতিটি রাজনীতিক, প্রতিটি নাগরিকের সম্মান, মর্যাদা ও নিরাপত্তার লড়াই। এখনই প্রয়োজন এসব অপরাধের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে জিরো টলারেন্স ঘোষণা। নইলে কাল এই সন্ত্রাসের শিকার হবেন আপনি, আমি অথবা আরও কেউ।